
প্রকাশিত: Wed, Apr 12, 2023 1:58 PM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 11:04 PM
হিপোক্রেট রাজ্যে অনন্য উদাহরণীয় একজন মানুষ
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন : [২] এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছিলেন যেই শার্টটি পরে কথা বলছেন সেটির বয়স ৩০ বছর। যেই প্যান্টটি পড়ে কথা বলছিলেন সেটিতে তালি দেওয়া। অথচ এই মানুষটি বিলেতে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন। সেখানে তখন তিনি এফআরসিএস পড়ছিলেন। একটি আয়েশি এবং বিলাসবহুল জীবন যাপন করছিলেন। সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, উনি যখন বিলাতে ছিলেন তখন সেখানে প্রাইভেট বিমান চালানোর লাইসেন্স ছিল। যেখান থেকে বা যেই দর্জি প্রিন্স চার্লসের স্যুট বানাতো সেই দর্জি ডা. জাফরুল্লাহর চৌধুরীর স্যুট বানাতো। সেখানে তার নিজস্ব গাড়ি ছিল। এর মধ্যে মুক্তি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। আর তিনি কী করলেন? সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে দেশকে স্বাধীন করতে নেমে পড়লেন। এসে আসামে মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীদের জন্য হাসপাতাল বানালেন। এর চেয়ে বড় মুক্তিযোদ্ধা আর কীভাবে হয়? তিনি আর তার বিলাসবহুল জীবনে ফিরে না গিয়ে গণমানুষের জাফরুল্লাহ হয়ে গেলেন। গণমানুষের জন্য গড়ে তুললেন গণস্বাস্থ্য, গণমানুষের জন্য গড়ে তুললেন গণবিশ্ববিদ্যালয়। তার হাত দিয়েই বাংলাদেশের ওষুধনীতি গড়ে উঠে। যাপন করতে থাকলেন এবং আমৃত্যু দেশের জন্য লড়ে গিয়েছেন। উনার দৃষ্টিতে যেটা সত্য বলে জেনেছেন বলেছেন। যেটা সত্য বলে ভেবেছেন করেছেন। এতে কে রাগ করলো আর কে গোস্বা করলো কেয়ার করেননি।
আফসোস এমন একজন মানুষকে জীবিতাবস্থায় কত নাজেহাল করা হয়েছে। এ দেশে যে ভালো মানুষের মূল্যায়ন হয় না তার প্রমাণ এইটা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার সবচেয়ে যোগ্য মানুষটি ছিলেন তিনি। তাকে তো মন্ত্রী বানানো হয়ইনি, উল্টো করোনার সময় কতভাবে, কতরকম করে নাজেহাল করার চেষ্টা করেছে। একটি টিভি চ্যানেল অনেক চেষ্টা করেছে তাকে ফাঁসিয়ে দিতে, বিতর্কিত করতে। সহজ-সরল, সাদা-সিধে মানুষকে কি এত সহজে ফাঁসানো যায়? দেখুন তিনি এখন কতো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত। তার মতো হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা নিকট অতীতে কেউ পেয়েছে কিনা সন্দেহ। উনিই আসল জয়ী। যারা চুরি, ঘুষ, দুর্নীতি করে টাকা কামায় তাদের সব কিছু তাদের দেহের সাথে বিলীন হয়ে যায়। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের মতো মানুষেরা দেহের মৃত্যুর পর তারা আবার নতুন করে জন্ম নেয়। মানুষকে শেখায় যে দেখ ভালো মানুষের মৃত্যু নেই।
[৩] মানুষতো মরণশীল এবং ডিগ্রেডেবল, কিন্তু মানুষের করে যাওয়া ভালো কাজগুলো অমর। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। মানুষটা আজীবন কখনো ক্ষমতার পেছনে ছুটেননি। একটি অতি সাধারণ জীবন যাপন করে গিয়েছেন যার প্রতিফলন বেশ ভূষাতেও স্পষ্ট। অনেক সময় দেখেছি, শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছেন একটা অনেক পুরোনো শার্ট ততোধিক পুরোনো প্যান্ট এবং একটি সাধারণ স্যান্ডেল পরে চলে আসতে। ইচ্ছে করলেই পাজেরোতে চড়তে পারতেন। ইচ্ছে করলেই বিদেশে থেকে যেতে পারতেন। কিন্তু এসব কিছু না করে মানুষের সন্তানদের মানুষ করার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় করেছেন, সাধারণ মানুষের জন্য একটি হাসপাতাল করেছেন। কোনোদিন ধান্দাবাজির আশ্রয় নেননি। আমাদের উদাহরণীয় মানুষের দুর্ভিক্ষের মাঝে তিনি একজন অনন্য উদাহরণীয় মানুষ হয়ে বেঁচে ছিলেন।
আমাদের সরকারের মন্ত্রী, আমলারা নিজ দেশে এমন চিকিৎসালয় বানান যেখানে তারা নিজেরাই চিকিৎসা নেন না, এমন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বানান যেখানে তাদের নিজ সন্তানদের পড়ান না। এরকম হিপোক্রিট রাজ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ব্যতিক্রমী একজন মানুষ। দেশের জন্য যারা যুদ্ধ করছে বা শরণার্থী হয়ে যারা ওপারবাংলায় আশ্রয় নিয়েছিল তাদের জন্য একটি হাসপাতাল চালু করেছিলেন। সেটা করতে বিলেতে ডাক্তারির উচ্চ শিক্ষা শেষ না করে বরং মাঝ পথেই চলে এসেছিলেন। ডাক্তারিতে তার আর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু এর বদলে যা করে গিয়েছেন তা অসাধারণ। ভালো কাজ করে গিয়েছেন বলেই গোটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে কেবল তাকে স্মরণ করেই মানুষ লিখছে। এই ভালোবাসা প্রকাশে কোন লোভ নেই। কেবলই ভালোবাসা। ১৮/২০ কোটি মানুষের দেশে হাতেগোণা যে কয়জন দেশপ্রেমী ভালো মানুষ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন চলে গেলেন আজ। আপনার জন্য প্রাণ উজাড় করে শ্রদ্ধা জানালেও শ্রদ্ধা জানানোর তৃষ্ণা মেটে না। লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
